সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠি জেলায় সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান ও হলতা নদীতে শীত মৌসুমেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। আকারে বেশ বড় এসব ইলিশ অন্যান্য সময়ের চেয়ে খেতেও সুস্বাদু। মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার ছাড়িয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে শহরের অলি-গলিতে।ঝালকাঠি মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, শীতে সাধারণত ইলিশ মাছের আমদানি কম থাকে। কিন্তু এ বছর শীতে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। অন্যান্য বছর এ সময় বাজারে ছড়াছড়ি থাকে সামুদ্রিক মাছের, কিন্তু এ বছর অসময়ে ইলিশের ছড়াছড়ি। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এখন ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজনও বেড়েছে।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠি গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। শেষ হয় বরিশালের কীর্তণখেলার পশ্চিমাংশে গিয়ে। সুগন্ধার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে বেশিরভাগ জেলে ইলিশ শিকার করেন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল, কংসারদীঘি, কুমারখালী ও দপদপিয়া পুরনো ফেরিঘাট এলাকায়। জেলার বিষখালী নদীর ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে দিয়াকুল, বাদুরতলা, ভবানীপুর, বাদুরতলা, বড়ইয়া, পালট, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, চল্লিশকাহনিয়া, প্রভৃতি এলাকায় শত শত জেলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন এসব এলাকায়। জেলেদের বেশিরভাগই নদীর দুই তীরের বাসিন্দা।
নদীতে বর্তমানে ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-আড়াই কেজির ইলিশও ধরা পড়ে জেলেদের জালে। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এখন এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ঝালকাঠি শহরের বারোচলা সংলগ্ন বড় বাজার, চাঁদকাঠি চৌমাথা বাজার, নলছিটি লঞ্চঘাট বাজার, পুরাতন বাজার, কুমারখালী বাজারে বছরের সব সময়ই পাওয়া যায় ইলিশের দেখা। মৌসুমের সময় দাম কম থাকে এসব বাজারে। বাকি সময় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয় ইলিশ।
নলছিটি জেলে জুধিস্টি দাস বলেন, আমাদের নদীতে সারাবছরই ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় টুকো বাদ দিয়ে আমরা দিনরাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরি। মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জালে। তাজা ইলিশ নদীর তীরে বসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়।
চাঁদকাঠি বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী ধ্রুব মালো বলেন, সাগরের ইলিশের চেয়ে সুগন্ধা-বিষখালী নদীর ইলিশের দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। শীত মৌসুমে ধরা পড়া ইলিশের স্বাদও অন্য সময়ের চেয়ে ভালো।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা, বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অভিযানের সময় জেলেরা নদীতে নামতে পারেনি। যারা নেমেছে, তাদের আটক করা হয়েছে। তাই এ বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে। সুগন্ধার-বিষখালীর মিঠা পানির ইলিশ খেতে সুস্বাদু, তাই স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে ইলিশ কিনছে জেলেদের কাছ থেকে।
Leave a Reply